কর্মক্ষেত্রে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা (Safety Precuation in workplace)
আমাদের চারিপাশে ড্রাফটিং ল্যাব, কম্পিউটার ল্যাব, ইলেকট্রিক্যাল শপ, অটো ওয়ার্কশপ, ওয়েন্ডিং ওয়ার্কশপ ইত্যাদি কর্মক্ষেত্রে নানাবিধ কৰ্মকান্ত প্রতিনিয়তই দেখতে পাই। এ সকল কর্মক্ষেত্রে ড্রাফটিং টুলস, হ্যান্ড টুলস, পাওয়ার টুলস, বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি, নানাবিধ সেইফটি টুলস এন্ড ইকুইপমেন্ট ব্যবহার করে বিভিন্ন প্রকার ডিজাইন-ড্রইং, যন্ত্রাংশ তৈরী ও মেরামত কাজ করা হয়। এ সকল কাজে টুলস ইকুইপমেন্ট এর সঠিক ব্যবহার নিরাপদ কর্মপরিবেশ উপর নির্ভশীল। ওয়ার্কশপে প্রতিকূল অবস্থা প্রতিরোধের মাধ্যমে নিরাপদ কর্ম-পরিবেশ তৈরী করার নামই অকুপেশনাল সেইফটি বা পেশাগত নিরাপত্তা। ওয়ার্কশপে সামষ্টিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে যে সকল সুরক্ষা সরঞ্জাম ব্যবহার করা হয় তাদেরকে সেইফটি ইকুপমেন্ট নামে অভিহিত করা হয়। যেমন-হ্যান্ড গ্লোভস, হেলমেট ইত্যাদি। কর্মক্ষেত্রে এরকম সেইফটি ইকুইপমেন্ট ব্যবহারে সতর্কতামূলক বিধি ব্যবস্থা প্রতিপালনের মাধ্যমে প্রতিকূল অবস্থাকে নিরাপদ পরিবেশে রূপান্তর করা হয়। এ লক্ষ্যে নিরাপদে কাজ করা ও নিরাপত্তা রক্ষায় এসব নিম্নম সতর্কতার সাথে মেনে চলা উচিত।
সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসাবে ব্যবহৃত সেইফটি ইকুইপমেন্ট -
সেইফটি ইকুইপমেন্ট (পিপিই) হলো- এমন ধরনের গোলাক, যন্ত্রপাতি বা বস্তু যা একজন ব্যক্তিকে দুর্ঘটনার কারণে ক্ষতির সম্ভাবনা অথবা অসুস্থ হওযার ঝুঁকি থেকে রক্ষা করে
ড্রাফটিং কাজে ব্যক্তিগত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি বা দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষাম ব্যবহৃত সেইফটি ইকুইপমেন্ট এর নাম নিম্মে চিত্রসহ দেওবা হলো-
ছবিগুলো দেখে তোমাদের কী মনে হচ্ছে ? সাধারন হ্যান্ড টুলস ও সুরক্ষা ডিভাইস এর মধ্যে পার্থক্য | আছে কী ? নিশ্চয়ই ছবি দেখেই বুঝতে পারছ কীভাবে সুরক্ষা ডিভাইস শনাক্তকরনসহ তালিকা তৈরী করা যাবে।
সেইফটি ইকুইপমেন্টগুলির ব্যবহার (Uses of Safety Equipment)
সেইফটি ইকুইপমেন্ট এর ব্যবহার নিম্নে উল্লেখ করা হলো-
চছবিগুলো দেখে তোমাদের কী মনে হচ্ছে ? ওয়ার্কশপে নিরাপদে কাজ করার সহায়ক পরিবেশ আছে কি? ছবি দেখে নিশ্চয়ই বুঝতে পারছো ভিন্ন ভিন্ন পরিবেশে কাজ করার আগে ও পরে কীভাবে নিজেকে নিরাপদ রাখতে হবে।
পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা (Occupational Health and Safety)
স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬ (২০০৬ সনের ৪২ নং আইন সংশোধনী-২০১৩) যথাযথ ভাবে মেনে চলা উচিত। নিম্নে শ্রম আইন এর সাধারণ নির্দেশাবলি ও সংশ্লিষ্ট ধারাগুলো উল্লেখ করা হলো-
ধারা- ৫১ ও বিধি-৪০ কর্মক্ষেত্রের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা:
প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে এবং কোন নর্দমা, পায়খানা বা অন্য কোনো জঞ্জাল হতে সৃষ্ট দূষিত বাষ্প হতে মুক্ত রাখতে হবে এবং বিশেষ করে-
ক) প্রতিষ্ঠানের মেঝে, কক্ষ, সিঁড়ি, যাতায়াতের পথ হতে প্রতিদিন ঝাড়ু দিয়ে ময়লা ও আবর্জনাঢাকনা দেওয়া বাক্সে অপসারন করতে হবে, যাতে উক্ত আবর্জনা দুর্গন্ধ বা জীবাণু বিস্তার করতে না পারে; ধাতব পদার্থ, উৎকট গন্ধময় আবর্জনা, রাসায়নিক আবর্জনা ও মেডিকেল আবর্জনা ভিন্ন ভিন্ন বাক্সে প্রতিদিন নিষমিত অপসারণ করতে হবে।
(খ) প্রত্যেক কর্মক্ষেত্রের মেঝে সপ্তাহে অন্তত একদিন কাজের প্রকৃতি ভেদে পানি দ্বারা ধৌত করতে হবে এবং প্রয়োজনে ধোয়ার কাজে জীবানুনাশক ব্যবহার করতে হবে। অবস্থাভেদে জীবানুনাশক ব্যবহার করে ভিজা কাপড় দ্বারা মেঝে ধুয়ে দিতে হবে।
(গ) যে ক্ষেত্রে উৎপাদন প্রক্রিয়ার কারণে কোনো মেঝে এমনভাবে ভিজে যায় যে, এর জন্য পানি নিষ্কাশনের প্রয়োজন হয়, সেক্ষেত্রে পানি নিষ্কাশনের উপযুক্ত ব্যবস্থা করতে হবে। ধারা ৫১(গ) বিধি ৪২ অনুযায়ী কর্মকক্ষ ভিজে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকলে-
(১) উক্ত মেঝে অবশ্যই অভেদ্য পদার্থ (Impervious Material) দ্বারা নির্মিত হতে হবে;
(২) উক্ত মেঝের নির্মাণ কৌশল ঢালু বিশিষ্ট এবং উপযুক্ত নিষ্কাশন নালার মাধ্যমে কারখানার মূল নর্দমা ব্যবস্থা সাথে সংযুক্ত থাকতে হবে, যাতে নিষ্কাশিত পানি অথবা কোন তরল পদার্থ মেঝেতে জমে থাকতে না পারে।
ঘ) প্রতিষ্ঠানের সকল জাভ্যন্তরীণ দেওয়াল, পার্টিশন, ছাদ, সিঁড়ি,যাতায়াত পথ-
(১) রং অথবা বার্নিশ করা থাকলে প্রতি তিন বছরে অন্ততঃ একবার পুনরায় রং অথবা বার্নিশ করতে হবে।
২) রং অথবা বার্নিশ করা এবং বহির্ভাগ মসৃণ হলে, প্রতি চৌদ্দ মাসে অন্ততঃ একবার ধারা-৫১(ঘ) বিধি ৪৩ অনুযায়ী পানি, ব্রাশ ও ডিটারজেন্ট দ্বারা ঘষে পরিষ্কার করতে হবে।
(৩) অন্যান্য ক্ষেত্রে প্রতি চৌদ্দ মাসে অন্ততঃ একবার চুনকাম বা রং করতে হবে, এবং (ঙ) দফা (ঘ)তে উল্লিখিত কার্যাবলি সম্পন্ন করার তারিখ ধারা ৫১ (ঘ) বিধি-৪৪ অনুযায়ী ফরম-২০ ব্যবহার রেজিস্টারে লিপিবদ্ধ করে রাখতে হবে।
ধারা-৫২ ও বিধি-৪৫ বায়ু চলাচল ও তাপমাত্রা:
১) প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি কর্মকক্ষে নির্মল বায়ু প্রবাহের জন্য পর্যাপ্ত বায়ু চলাচল ব্যবস্থা রাখতে হবে ।
(২) উক্তরুপ প্রত্যেক কক্ষে তাপমাত্রা সহনীয় পর্যায়ে রাখতে হবে এবং প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি কর্মকক্ষে নির্মল বায়ু প্রবাহের সুবিধার্থে পর্যাপ্ত সংখ্যক বিপরীতমুখী জানালার ব্যবস্থা থাকতে হবে ;
ধারা-৫৬। অতিরিক্ত ভীড়
১) প্রতিষ্ঠানের কোনো কর্মকক্ষে কর্মরত শ্রমিকদের স্বাস্থ্য হানি হয় এই প্রকার অতিরিক্ত ভীড় করা যাবে না।
(২) উপর্যুক্ত বিধানের হানি না করে,প্রত্যেক কর্মকক্ষে কর্মরত শ্রমিকের জন্য অন্ততঃ ৯.৫ কিউবিক মিটার পরিমাণ জায়গার ব্যবস্থা করতে হবে।
ধারা-৫৭ ও বিধি-৪৯ আলোর ব্যবস্থা:
(১) কোনো প্রতিষ্ঠানের প্রত্যেক অংশে, যেখানে শ্রমিকগণ কাজ করে বা যাতায়াত করেন, যথেষ্ট স্বাভাবিক বা কৃত্রিম বা উভয়বিধ আলোর ব্যবস্থা করতে হবে।
(২) প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানে কর্মক্ষেত্র আলোকিত করার জন্য ব্যবহৃত সকল কাঁচের জানালা এবং ছাদে বসানো জানালা সমূহের উভয় পার্শ্ব পরিষ্কার রাখতে হবে।
(৩) প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানে-
(ক) কোনো স্বচ্ছ পদার্থ বা বাতি হতে বিচ্ছুরিত বা প্রতিফলিত আলোকচ্ছটা, অথবা
(খ) কোনো শ্রমিকের চোখের উপর চাপ পড়তে পারে বা তার দুর্ঘটনার ঝুঁকি থাকতে পারে, এরূপ কোনো সৃষ্ট ছায়া প্রতিরোধ করার জন্য কার্যকর ব্যবস্থা থাকতে হবে।
Read more